গতকাল অনুষ্ঠিত ২০২৫-২০২৮ মেয়াদের অভিনয়শিল্পী সংঘের নির্বাচনে সভাপতি পদে বিজয়ী হয়েছেন গুণী অভিনেতা ও নাট্য ব্যক্তিত্ব আজাদ আবুল কালাম। ছোটপর্দার অভিনয়শিল্পীদের নতুন এই নেতা সমসাময়িক বিষয়ে কথা বলেছেন।
গতকাল নির্বাচনের ভেন্যুতে এক ফ্রেমে বন্দী হন আফজাল হোসেন, গাজী রাকায়েত, শতাব্দী ওয়াদুদ, আজাদ আবুল কালাম ও রওনক হাসানের মতো গুণী অভিনেতা আজাদ আবুল কালাম বলেন, একটা সুষ্ঠু সুন্দর নির্বাচন হয়েছে, যেটা আগেও হয়ে এসেছে। এজন্য আমি খুশি। এটা আসলে অভিনেতাদের নেতা নির্বাচন তো, তাদের চোখে নেতা হতে পারেন এমন ২১জনকে নির্বাচন করেছেন তারা। সবচেয়ে ভালো বিষয় হলো, এটা কোন প্যানেলভিত্তিক নির্বাচন নয়।
প্রত্যেকে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করেছেন। আর আমরা শুরু থেকেই বলে আসছি যে, অভিনয়শিল্পী সংঘের নির্বাচনে জিতবে ২১, হারবে না কেউ। তার মানে হলো এখানে হার-জিত কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। তবে এটা একটা চ্যালেঞ্জিং অর্জন। কারণ, এই সংঘে নিবন্ধিত ৭০০’র অধিক অভিনয়শিল্পী তাদের ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন করেন।
শোবিজের বিভিন্ন সংগঠনের নির্বাচনে আমরা নানা ধরনের নেতিবাচক পরিস্থিতি তৈরি হতে দেখি। কিন্তু অভিনয়শিল্পী সংঘের নির্বাচন বরাবরই উৎসবমুখর পরিবেশে হয়। এর কারণ কি বলে মনে করেন? এই সংগঠন আসলে তৈরিই হয়েছিলো অভিনয়শিল্পীদের সহমর্মিতার জায়গা থেকে। সেই সঙ্গে সদস্যদের নৈতিকতার প্রশ্নও আসে। তাছাড়া দেখা যাচ্ছে পর্দায় যার সঙ্গে ভাইয়ের অভিনয় করছি তার সঙ্গেই আবার নির্বাচনে লড়তে হচ্ছে। মোটকথা প্রতিনিয়ত একসঙ্গে কাজ করতে হয়, দেখা হয়। আরেকটা ব্যাপার হলো, আমরা যারা টেলিভিশন মিডিয়াতে কাজ করি তাদের সবকিছুই আসলে একটা কাছাকাছি জায়গায় থাকে। সেটা পড়াশুনা বলি, অর্থনৈতিক অবস্থা কিংবা মানসিকতা- এসবে একে অপরের সঙ্গে আকাশ পাতাল পার্থক্য আসলে নেই। যার ফলে একটি সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে আমরা নির্বাচন করতে পারি কোন রকম রেষারেষি কিংবা কাঁদা ছুড়াছুড়ি ছাড়াই।
বলিউড অভিনেত্রী কঙ্গনা রানৌত জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার পর এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিলেন, ভেতর থেকে জাতীয় পুরস্কার অনুভব হচ্ছে কি না? কঙ্গনার সেই উত্তর দারুণ ভাইরাল। আপনাকে যদি একই প্রশ্ন করা হয় যে, প্রথমবার অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি হয়ে কি অনুভব হচ্ছে? আমি এ ব্যাপারে খুব নির্লিপ্ত ছিলাম। কারণ আমি আগে থেকেই এটা বিশ্বাস করেছি যে, আমার প্রতিপক্ষ আব্দুল্লাহ রানা জিতলেও আমার জয়, আবার আমি জিতলেও তার জয়। আমার কাছে বরং এই জয় যতোটা আনন্দের, তার চেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জের। কারণ, সামনে আমাকে ঠিকমতো কাজ করে দেখাতে হবে।
নির্দিষ্টভাবে বলতে বললে আপনার মেয়াদে কোন কাজটি বাস্তবায়নে সবচেয়ে প্রাধান্য দিতে চান? অভিনয় যে একটা পেশা সেটাই এখনো রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃত নয়। ফলে অভিনেতা বা নেতা হিসেবে আমার সর্বপ্রথম চাওয়াই হলো অভিনয়কে পেশা হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দেওয়া। এই কাজটি আমার আগের নেতারাও করতে চেয়েছেন। আমি চাইবো সেটি যেন বাস্তবায়ন হয়। এছাড়া আমাদের নতুন কমিটির কাজ হলো আগের কমিটি যে কাজগুলো শুরু করেছিলো সেই কাজগুলোর পূর্ণতা আনা।
সম্প্রতি একাধিক অভিনয়শিল্পী ‘মব জাস্টিস’-এর শিকার হয়েছেন। এ ক্ষেত্রে সংঘের ভূমিকা কেমন হবে? যখনই এ ধরনের পরিস্থিতি হয়েছে অভিনয়শিল্পী সংঘ জোরালো প্রতিবাদ করেছে। তবে সবার প্রতিবাদের ভাষা তো আর এক হবে না। এই সংঘ কখনোই কোন মবের বিরুদ্ধে প্রতবাদস্বরূপ হাতাহাতি পর্যায়ে যেতে পারে না। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করবো নেগোশিয়েট করতে। কখনোই আমরা আক্রমনাত্মক হবো না। তবে আমরা সব সময় শিল্পীদের স্বার্থ রক্ষায় পাশে থাকবো, ন্যায়সঙ্গতভাবে অন্যায়ের প্রতিবাদ করবো।