স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ দলটির শাসনামলে নানা বিতর্ক, সহিংসতা ও দমন-পীড়নের অভিযোগ বারবার উঠেছে। সাম্প্রতিক গোপালগঞ্জের ঘটনা সেই ধারারই অংশ, যেখানে বিরোধী দলের কর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে।
১৯৭৫ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ‘বাকশাল’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একদলীয় শাসন চালু করে। এতে গণতন্ত্র, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা চরমভাবে সংকুচিত হয়। বিরোধী মত দমন, সংবাদপত্র বন্ধ, এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে।
আওয়ামী লীগের শাসনামলে গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যা, এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অপব্যবহারের অভিযোগ ব্যাপকভাবে উঠেছে। বিশেষ করে ২০০৯ সালের পর থেকে র্যাব ও পুলিশের বিরুদ্ধে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের গুম ও হত্যার অভিযোগ আন্তর্জাতিক মহলেও আলোচিত হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক রয়েছে। বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ, আওয়ামী লীগ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে ভোট কারচুপি, বিরোধী প্রার্থীদের ওপর হামলা, এবং ভোটারদের ভয়ভীতি দেখিয়েছে। অনেক আসনে ভোটাররা কেন্দ্রে যেতে পারেনি, এবং বিরোধী দল নির্বাচন বর্জন করেছে।
আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিরোধী দলের সভা-সমাবেশে হামলা, মামলা, গ্রেফতার, এবং নির্যাতনের ঘটনা নিয়মিত ঘটেছে। ছাত্রলীগ ও যুবলীগের হাতে বিরোধী দল, সাংবাদিক, এমনকি সাধারণ নাগরিকও হামলার শিকার হয়েছে। গোপালগঞ্জের সাম্প্রতিক ঘটনাও এই ধারারই অংশ, যেখানে বিরোধী দলের কর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে।
আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনামলে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, এবং দলীয়করণের অভিযোগ ব্যাপকভাবে উঠেছে। সরকারি চাকরি, টেন্ডার, এবং উন্নয়ন প্রকল্পে দলীয়করণ ও দুর্নীতির অভিযোগ সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে।
আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বিরোধী দল ও সমালোচকদের মতে, বিচার বিভাগে দলীয় হস্তক্ষেপ বেড়েছে, এবং রাজনৈতিক মামলায় পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ রয়েছে।
সাম্প্রতিক গোপালগঞ্জের ঘটনা
গোপালগঞ্জ আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। এখানে বিরোধী দলের কর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা নতুন নয়। সাম্প্রতিক হামলাটি আবারও দেখিয়েছে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ধরে রাখতে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করছে এবং বিরোধী কণ্ঠ দমন করছে।
রাজনৈতিক সহিংসতা, দমন-পীড়ন, এবং অস্থিরতার কারণে দেশের অর্থনীতি, বিনিয়োগ, এবং সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে, ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে, এবং সাধারণ মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
আওয়ামী লীগের শাসনামলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে সহিংসতা, দমন-পীড়ন, মানবাধিকার লঙ্ঘন, এবং গণতন্ত্র সংকুচিত হয়েছে—এমন অভিযোগ বিরোধী দল ও সমালোচকদের। গোপালগঞ্জের সাম্প্রতিক ঘটনা সেই ধারারই অংশ। দেশের গণতন্ত্র ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্বশীল ভূমিকা ও জনগণের সচেতনতা জরুরি, নতুবা দেশের অগ্রগতি ও স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়বে।