রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র শাহবাগ মোড়ে আবারও উত্তাল হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক উত্তাপ। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের ডাকে সোমবার (২০ মে) সকাল থেকে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়ে ব্যাপক বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেছে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। ফলে শাহবাগ এলাকাসহ এর আশপাশের সড়কে তীব্র যানজট দেখা দিয়েছে, ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
ব্লকেড কর্মসূচি ঘিরে তীব্র উত্তেজনা: সকাল ১০টা থেকেই বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকেন শাহবাগ মোড়ে। বেলা ১১টার দিকে পুরো মোড় অবরোধ করে তারা অবস্থান নেন এবং সরকারবিরোধী নানা স্লোগানে মুখরিত করে তোলেন পুরো এলাকা।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন, কারাবন্দি সকল ছাত্রনেতার মুক্তি, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ ও সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলসহ সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ‘মিথ্যা মামলা’ প্রত্যাহার, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রশাসনের ‘সরকারপন্থী দমন নীতি’ বন্ধ করা।
অবস্থান কর্মসূচি থেকে হুঁশিয়ারি, অবস্থান কর্মসূচি থেকে বক্তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “দেশে ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন না ঘটানো পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়ব না। যতই গুলি বা লাঠিচার্জ আসুক, ছাত্রসমাজ মুক্তির আন্দোলন থেকে পিছু হটবে না।”
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, “এই সরকার শিক্ষাঙ্গন ধ্বংস করেছে, ছাত্রদের মুখে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে, বিরোধী মতের ছাত্রদের ওপর জুলুম চালাচ্ছে। আমরা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিচ্ছি, শাহবাগেই শুরু, প্রয়োজনে রাজপথেই ফয়সালা হবে।”
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্ক অবস্থান: শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূর মোহাম্মদ জানান, “বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে। যাতে কোনও সহিংসতা না হয়, সে বিষয়েও সতর্ক আছি।”
তবে দুপুরের দিকে পরিস্থিতি কিছুটা উত্তপ্ত হয়ে উঠলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয় শাহবাগ মোড়ে। মোড়ে বালুর বস্তা ও জলকামান প্রস্তুত রাখা হয়।
সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ: শাহবাগ, রমনা, টিএসসি, বাংলামোটর, পলাশীসহ আশপাশের এলাকায় সড়ক অবরোধের কারণে তীব্র যানজট তৈরি হয়। অফিসগামী মানুষ, রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স ও স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েন।
একজন যাত্রী বলেন, “মিরপুর থেকে ৪৫ মিনিটে শাহবাগ এসে এখন এক ঘণ্টা ধরে আটকে আছি। কী হচ্ছে কেউই বুঝতে পারছে না। শুধু দেখি রাস্তায় মিছিল, চিৎকার।”
পূর্বের আন্দোলনের ধারাবাহিকতা: ছাত্রদল জানায়, এটি তাদের চলমান আন্দোলনের অংশ। এর আগে তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, প্রেস ক্লাব ও মতিঝিলে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি চলবে বিকেল পর্যন্ত। এরপর পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ বাড়তেই থাকছে। সরকারবিরোধী আন্দোলন এবং ছাত্রসংগঠনগুলোর ক্রমবর্ধমান সক্রিয়তা শাসকগোষ্ঠীর জন্য চাপ বাড়িয়ে তুলছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।