বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দায়ের হওয়া মামলাগুলোর আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেওয়ার যে নির্দেশনা জারি করেছিল ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি), তার কার্যকারিতা স্থগিত করে হাইকোর্ট যে আদেশ দিয়েছিল, সেটি আজ (রোববার) আপিল বিভাগেও বহাল রাখা হয়েছে।
প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে গঠিত আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
পটভূমি ও প্রেক্ষাপট:
ডিএমপি কমিশনারের পক্ষে গত ৯ এপ্রিল একটি অফিস আদেশ জারি করা হয়। সেখানে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন-সংক্রান্ত মামলাগুলোর অধিকাংশে এজাহারভুক্ত আসামির সংখ্যা অনেক বেশি। এসব মামলায় যেসব আসামিকে গ্রেফতার করা হবে, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ প্রমাণ (যেমন: ভিকটিমের বক্তব্য, প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য, ভিডিও/অডিও ফুটেজ, স্থিরচিত্র, কলডিটেইল রেকর্ড – সিডিআর ইত্যাদি) থাকতে হবে এবং গ্রেফতারের আগে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে। অনুমতি ছাড়া কোনো আসামিকে গ্রেফতার না করার নির্দেশনাও ছিল সেখানে।
এই আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. জসিম উদ্দিন একটি রিট দায়ের করেন। রিটের শুনানি শেষে গত ২৩ এপ্রিল বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আদেশটি তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন এবং রুল জারি করেন—জানতে চেয়ে, কেন এ আদেশ অবৈধ ঘোষণা করা হবে না।
ডিএমপির পক্ষে হাইকোর্টের এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা হলে ৭ মে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত তা স্থগিত না করে মূল আপিল বিভাগের বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন।
আজ (১ জুন) চূড়ান্ত শুনানির পর প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখে, অর্থাৎ এখন থেকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন-সংক্রান্ত মামলায় আসামি গ্রেফতারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতির প্রয়োজন নেই।
আইন বিশেষজ্ঞদের মত:
ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, “এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। আইন অনুযায়ী, কোনো এজাহারনামীয় আসামিকে গ্রেফতারের জন্য আলাদা অনুমতির প্রয়োজন পড়ে না। ডিএমপির আদেশটি পুলিশের স্বাধীনতা ও গ্রেফতার কার্যক্রমের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ করেছিল।”
প্রভাব ও গুরুত্ব:
এই আদেশের ফলে এখন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন-সংক্রান্ত মামলাগুলোতে পুলিশ সরাসরি আইন অনুযায়ী গ্রেফতারি পদক্ষেপ নিতে পারবে, ঊর্ধ্বতন অনুমতির অপেক্ষা করতে হবে না। এতে মামলার তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়াও আগের চেয়ে স্বচ্ছ ও গতিশীল হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।