ইসরায়েল-ইরান সংঘাতের ছায়ায় জি-৭ সম্মেলন শুরু, যৌথ বিবৃতি ছাড়াই বৈঠক চালিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব নেতারা
ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে তীব্র সামরিক উত্তেজনা এবং বৈশ্বিক বাণিজ্য বিরোধের মধ্যেই শুরু হয়েছে জি-৭ সম্মেলন ২০২৫। কানাডার রকি পর্বতমালায় অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে বিশ্বের শক্তিশালী সাতটি অর্থনৈতিক শক্তির নেতা একত্রিত হয়েছেন। রোববার (১৫ জুন) স্থানীয় সময় সম্মেলনের উদ্বোধন হয়।
বিশ্ব রাজনীতির উত্তাল সময়ের মধ্যেই শুরু হওয়া এই সম্মেলনে আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে ইসরায়েল-ইরান সংঘাত, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আগ্রাসী বাণিজ্য নীতি, এবং বৈশ্বিক নিরাপত্তা হুমকি।
এদিকে বার্তা সংস্থা এপি এক মার্কিন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানায়, ইসরায়েল ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল, তবে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সেই পরিকল্পনায় ভেটো দেন। এই তথ্য ইসরায়েলি আগ্রাসনের তীব্রতা এবং সংঘাতের গভীরতা তুলে ধরে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার আশা প্রকাশ করেছেন, চলমান সংঘাত নিয়ে জি-৭ সম্মেলনে গভীর আলোচনা হবে। তিনি জানান, সম্মেলনের আগে তিনি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আলাদা করে বৈঠক করেছেন।
সম্মেলনের আয়োজক ও কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি জানিয়েছেন, ট্রাম্পের সঙ্গে মতপার্থক্যের কারণে এবার জি-৭ সম্মেলনের পর কোনো যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা হবে না। এটি গোষ্ঠীটির দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য হলেও, বর্তমান বাস্তবতায় তা সম্ভব নয় বলে জানান তিনি।
সম্মেলনের আগে ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ গ্রিনল্যান্ড সফরে যান এবং ট্রাম্পের গ্রিনল্যান্ড কেনার আগ্রহের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেন, “গ্রিনল্যান্ড বিক্রির জন্য নয় এবং ছিনিয়ে নেওয়ার জন্যও নয়। এটি একটি সার্বভৌম অঞ্চল।”
জি-৭-এর সদস্য নয়, এমন দেশগুলোর নেতাদেরও এবারের সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ভারত, ইউক্রেন, ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, মেক্সিকো এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত—এই আট দেশের নেতারা উপস্থিত রয়েছেন। আলোচনার অন্যতম কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কভিত্তিক বাণিজ্য নীতি।
ওয়াশিংটন ছাড়ার আগে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, “সম্মেলনে নতুন একটি বাণিজ্য চুক্তির ঘোষণা আসতে পারে।” তবে তার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক নিয়ে কিছু নেতারা বিচলিত। ইউক্রেন ও দক্ষিণ আফ্রিকার নেতাদের ওপর চাপ প্রয়োগের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
সাবেক কানাডীয় প্রধানমন্ত্রী জ্যাঁ ক্রেতিয়ান এই প্রসঙ্গে বলেন, “যদি ট্রাম্প সংবাদ শিরোনাম পেতে কোনো দৃশ্য তৈরি করতে চান, তাকে করতে দিন। শান্ত থাকুন এবং নিজের কাজ চালিয়ে যান।”
ইসরায়েলি হামলার পর ইরানে পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় বিশ্ববাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। ওয়াল স্ট্রিটে সূচক পতন হয়েছে এবং তেলের দাম বেড়েছে, যা বৈশ্বিক মুদ্রাস্ফীতির ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ট্রাম্পের সাম্প্রতিক বক্তব্যে তিনি বলেন, “কানাডা যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম রাজ্য হওয়া উচিত।” এই মন্তব্যে প্রতিক্রিয়া না জানানোয় স্টারমার সমালোচিত হন। পরে তিনি বলেন, “কানাডা একটি স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র এবং কমনওয়েলথের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার।”
সম্মেলন ঘিরে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে আলোচনা চলছে যে, এটি “জি-৬ বনাম ট্রাম্প” সম্মেলনে রূপ নিতে পারে। তবে জার্মান কর্মকর্তারা এ ধরনের অনুমানকে “ভিত্তিহীন” বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। বরং তারা বলছেন, সদস্য দেশগুলোর মধ্যেও নিজস্ব মতভেদ রয়েছে।
ক্রেতিয়ান আরও বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট কী করবেন, তা নির্ভর করে তার মেজাজ ও সংবাদ শিরোনামে থাকার ইচ্ছার ওপর। এটিই সবচেয়ে অপ্রত্যাশিত দিক।”
জি-৭ সম্মেলনের পরবর্তী দিনের বৈঠকগুলোতে আরও চমক থাকতে পারে বলেই ধারণা করছে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহল।