Wednesday, July 30, 2025

এক সংকট উত্তরণের নেতৃত্ব ঐক্যের প্রতীক খালেদা জিয়া

Date:

ঈদুল আজহার আগের দিন থেকে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে যে অনিশ্চয়তা ও উত্তেজনার আবহ তৈরি হয়েছিল, তা অনেকটাই প্রশমিত হয়েছে লন্ডনে অনুষ্ঠিত একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের মাধ্যমে। এই বৈঠকের আয়োজন এবং রাজনৈতিক উত্তেজনা প্রশমনে যিনি নেপথ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন, তিনি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। অসুস্থতা ও দীর্ঘ রাজনৈতিক নিপীড়নের মধ্যেও তাঁর প্রজ্ঞা, অভিজ্ঞতা এবং নেতৃত্বই এক কঠিন সময়ের জাতীয় সংকটকে সমঝোতার পথে এগিয়ে নিয়ে যায়।

৬ জুন, ঈদের আগের দিন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আকস্মিকভাবে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে ঘোষণা করেন, জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধে। কোনো রাজনৈতিক দল, নির্বাচন কমিশন কিংবা সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই এ ঘোষণায় রাজনৈতিক মহলে বিস্ময় ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল দীর্ঘদিন ধরে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছিল। এমন অবস্থায় এই ঘোষণা রাজনৈতিক অঙ্গনে উদ্বেগ বাড়িয়ে তোলে।

ঘটনার পরপরই বিএনপি তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায় এবং স্থায়ী কমিটির সভায় প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে বিবৃতি দেয়। এ সময় অধিকাংশ রাজনৈতিক দলও ড. ইউনূসের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে। কিন্তু উত্তেজনার মুহূর্তে খালেদা জিয়া সামনে এসে জাতিকে নতুন করে দিকনির্দেশনা দেন। ঈদের দিন তিনি ফিরোজায় দলের শীর্ষ নেতাদের ডেকে আলোচনা করেন এবং বলেন, “এখন জাতীয় ঐক্য নষ্ট করা যাবে না, আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধানে এগোতে হবে।” তিনি আরো বলেন, দেশের বৃহত্তর স্বার্থে দলীয় অবস্থান নমনীয় করে সংকট নিরসনে রাজনৈতিক সংলাপ জরুরি।

এরপরই বেগম জিয়ার পরামর্শে তারেক রহমান লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। বৈঠকের শুরুতেই তারেক রহমান বলেন, “আম্মা আপনাকে সালাম জানিয়েছেন,”—যা বোঝায়, খালেদা জিয়াই এখনো বিএনপির প্রকৃত অভিভাবক এবং জাতীয় রাজনীতির অন্যতম নিয়ামক শক্তি।

এই বৈঠকের মাধ্যমে বিএনপি তাদের পূর্বঘোষিত অবস্থান থেকে কিছুটা সরে এসে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব দেয়, যা একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ছাড়। এটি প্রমাণ করে, বিএনপি শুধু দলীয় লাভ-লোকসান নয়, দেশের বৃহত্তর স্বার্থে আপসহীন অবস্থান থেকেও আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে বিশ্বাস করে। আর এর মূলে ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া—যার দূরদৃষ্টি ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞা একটি সম্ভাব্য সংঘাত এড়াতে সহায়ক হয়।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান সময়ে বিএনপিই দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী রাজনৈতিক দল, যার নেতৃত্বে ৯০ শতাংশ বিরোধী রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ। এই ঐক্যের মূল ভিত্তি বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্ব এবং তাঁর সংগ্রামী রাজনীতি। ১৯৮২ সালে রাজনীতিতে প্রবেশের পর থেকে তিনি কখনো ব্যক্তিগত বা দলীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেননি, বরং সবসময় দেশ ও জনগণের স্বার্থকে সামনে রেখেছেন।

১৯৯১ সালে নির্বাচনে জয়লাভের পর তিনি সংসদীয় শাসনব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করেন—যা ছিল দেশের গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে আনার গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ১৯৯৬ সালে জনগণের দাবি মেনে তিনি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাও চালু করেন, যা আজও অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মূল ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হয়।

আজ, যখন দেশ একটি জটিল রাজনৈতিক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে, বেগম খালেদা জিয়া আবারও প্রমাণ করলেন—তিনি শুধু একজন রাজনীতিক নন, বরং জাতির কাণ্ডারি, একজন দূরদর্শী অভিভাবক, যিনি দলীয় সীমারেখা ছাড়িয়ে জাতীয় স্বার্থে কাজ করেন। তাঁর ঐক্যবদ্ধতার বার্তা, সহনশীলতা এবং গণতন্ত্রে বিশ্বাসই দেশকে এক নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

বেগম জিয়া আজ অসুস্থ, তিনি বারবার নির্যাতিত হয়েছেন, কারাবন্দি থেকেছেন, চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। তারপরও ব্যক্তিগত কষ্ট ও রাজনৈতিক নিপীড়নকে পাশে রেখে তিনি বারবার জাতির জন্য, দেশের জন্য কথা বলেছেন। তাঁর এই আপসহীন নেতৃত্ব, প্রজ্ঞা এবং দেশপ্রেমই তাঁকে পরিণত করেছে জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হিসেবে।

জাতি যখন একটি দিকহীন মুহূর্তে সংকটে পড়ে, তখন খালেদা জিয়ার মতো নেতার প্রজ্ঞা ও নেতৃত্বই সংকট উত্তরণে আলোর দিশা দেখায়। সেজন্যই, আজ অনেকেই বলছেন—তিনি শুধু বিএনপির নয়, বরং গোটা জাতির কাণ্ডারি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Share post:

spot_imgspot_img

Popular

More like this
Related

মাদকবিরোধী অভিযানে নীলফামারীতে কুখ্যাত বাশার আটক, পলাতক আরও দুই

আশীষ বিশ্বাস নীলফামারী প্রতিনিধি : নীলফামারীতে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের...

টেকনাফে র‍্যাবের সফল অভিযান: শীর্ষ সন্ত্রাসী শফি ডাকাত অস্ত্র-মাদকের পাহাড়ে আটক

ফরহাদ রহমান, টেকনাফ প্রতিনিধি টেকনাফের নয়াপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প-২৬ এর পাহাড়ি...

জেএসএস’র হাল ধরলেন আছিয়া আক্তার

“জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা”র হাল ধরলেন প্রতিষ্ঠাতার সহধর্মিণী মোছা: আছিয়া...

সান্তাহারে ট্রেন দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু

সান্তাহারে ট্রেন দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু মৌ আকতারঃবগুড়ার আদমদিঘী উপজেলার...