একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামী নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলাম শেষ পর্যন্ত আপিলের রায়ে খালাস পেয়েছেন।
মঙ্গলবার (২৭ মে) সকালে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে সাত সদস্যের আপিল বেঞ্চ এই ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করেন। দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে আদালতের এই সিদ্ধান্ত মানবতাবিরোধী অপরাধ সংক্রান্ত বিচারপ্রক্রিয়ার ইতিহাসে এক নতুন দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) জামায়াত নেতা আজহারুল ইসলামকে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করে।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, রংপুর অঞ্চলে পাকিস্তানি বাহিনীর সহায়তায় তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যাযজ্ঞ, গণহত্যা, ধর্ষণ ও লুণ্ঠনের মতো অপরাধ সংঘটনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন। অভিযোগে আরও উল্লেখ ছিল যে তিনি আল-বদর বাহিনীর রংপুর অঞ্চলের কমান্ডার ছিলেন এবং সরাসরি বিভিন্ন হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
আইসিটির রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি আপিল করেন আজহারুল ইসলাম। এরপর দীর্ঘ শুনানি শেষে ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর আপিল বিভাগ তার মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রাখেন।
তবে এর পরপরই জামায়াত নেতা আজহার রিভিউ আবেদন করেন। বিষয়টি পুনর্বিবেচনায় নিয়ে ২০২4 সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগ পুনরায় পূর্ণাঙ্গ শুনানির নির্দেশ দেন, যা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় প্রথমবারের মতো রিভিউ পর্যায় থেকে পুনরায় আপিল শুনানির সুযোগ প্রদান করে।
নতুন করে আপিল শুনানি শেষে ২০২5 সালের ২৭ মে আপিল বিভাগ আজহারুল ইসলামকে সব অভিযোগ থেকে খালাস দেন। আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগের পক্ষে নির্ভরযোগ্য, সন্দেহাতীত প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি। ফলে তাকে দোষী সাব্যস্ত করার কোনো আইনগত ভিত্তি নেই।
এই রায় মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারপ্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ বাঁক পরিবর্তন হিসেবে দেখা হচ্ছে। এর মাধ্যমে দেখা গেল, বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছে যাওয়ার পরও একজন অভিযুক্তকে পুনরায় সম্পূর্ণ নিরীক্ষার সুযোগ দেওয়া যেতে পারে এবং যথোপযুক্ত প্রমাণ না থাকলে সে খালাসও পেতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি বিচারিক স্বচ্ছতা ও ন্যায়বিচারের পরিপূর্ণ প্রতিফলন—যেখানে রাজনৈতিক ও মানবিক সংবেদনশীলতার বাইরে গিয়ে কেবল প্রমাণ ও যুক্তির ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।