রমজানে ভোগ্যপণ্যের দাম সহনীয় রাখতে শুল্ককর কমানোসহ বেশ কিছু উদ্যোগ নেয় সরকার। ফলে আমদানি খরচ কমায় রোজার আগে ভোক্তা পর্যায়ে এবার খেজুরের দাম বাড়েনি, বরং কিছুটা কমেছিল। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বস্তি দেখা গিয়েছিল।
কিন্তু রোজার শুরুতে পাল্টে গেছে বাজারের চিত্র। খেজুরের দাম এবার কমেছে– এমন প্রচারণার মধ্যেই গত দুই দিনে কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ৫০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত। শুল্কছাড় সুবিধা আর পর্যাপ্ত সরবরাহের মধ্যেও দাম বাড়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা। আর খুচরা ব্যবসায়ীরা দায় চাপালেন সিন্ডিকেটের ওপর।
রোববার (২ মার্চ) সকালে রাজধানীর বাড্ডা-রামপুরাসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র দেখা গেছে।রোজার প্রথম দিনে বাজার ঘুরে দেখা যায়, চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে প্রায় সব ধরনের খেজুরের দাম। বাজারে সবচেয়ে কম দামে বিক্রি হওয়া জাহেদী খেজুরের দাম ২০ থেকে ৪০ টাকা বেড়েছে। দাম কিছুটা কম হওয়ায় নিম্নবিত্তের ও খেটে খাওয়া মানুষের চাহিদায় থাকে এ খেজুর। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে প্রতি কেজি জাহেদী খেজুর বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায়। যা এক সপ্তাহ আগেও বিক্রি হয়েছে ২০০ থেকে ২৬০ টাকায়।
আরেকটু ভালো মানের খেজুর যারা খেতে চান তাদেরদের পছন্দে থাকে বরই খেজুর (দুবাইয়ের লুলু)। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাজারে এ খেজুরের চাহিদা বেশি থাকায় পাইকারি বাজারে আর পাওয়া যাচ্ছে না এ খেজুর। যে কারণে খুচরা বাজারে বরই খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৫২০ থেকে ৫৫০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগেও এ খেজুর বিক্রি হয়েছে ৪০০ টাকা থেকে ৪৫০ টাকায়।
বাজারে মধ্য ও উচ্চবিত্ত শ্রেণির চাহিদার শীর্ষে রয়েছে আজোয়া ও মরিয়ম খেজুর। বাড়তি চাহিদার কারণে এ দুই শ্রেণির খেজুরের দামও বেড়েছে বলে জানিয়েছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। তাদের দেওয়া তথ্যমতে, বাজারে আজোয়া খেজুর বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১২০০ থেকে ১২৫০ টাকায়। যা এক সপ্তাহ আগেও বিক্রি হয়েছে ১০৫০ টাকা কেজিতে। আর বাজারে মরিয়ম খেজুর বিক্রি হচ্ছে ১২০০-১২৮০ টাকায়। যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ১১০০ থেকে ১১৮০ টাকায়।
ক্রেতাদের পছন্দের শীর্ষে থাকা মেডজুল খেজুরের দামও কেজিপ্রতি ১৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। গত সপ্তাহেও বাজারে মেডজুল খেজুর ১৪০০ থেকে ১৪৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, সেটি রোজার প্রথম দিনে বিক্রি হচ্ছে ১৫৫০-১৬০০ টাকায়।
এছাড়াও বাজারে দাবাস খেজুর ৫০০ টাকা, মাশরুক ৮০০ টাকা, সুগাই খেজুর ১০০০ টাকা এবং ডাল খেজুর নামে পরিচিত তিউনিশিয়ান খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে এসব খেজুরের দাম ছিল যথাক্রমে ৪৬০, ৭০০, ৯৫০ এবং ৬০০ টাকা কেজি।
ক্রেতাদের মধ্যে ফের অসন্তোষ
রোজার শুরুতে খেজুরের দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতাদের মধ্যে ফের অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তাদের প্রশ্ন, সরকার তো শুল্ককর কমিয়ে দিয়েছে, নতুন করে করারোপ হয়নি। তাহলে কেজিপ্রতি খেজুরের দাম এত বাড়ল কেন? সরকারের কী এসব ক্ষেত্রে কিছুই করার নেই?
সাইদুল ইসলাম নাম এক ক্রেতা বলেন, সরকার দাম কমানোর উদ্যোগ নিয়ে খেজুরসহ রোজার কিছু পণ্যে শুল্ক কমিয়েছে শুনেছি। কিন্তু এর মধ্যেও রোজার এক-দুই দিন আগে আবারও দাম বাড়িয়ে দিয়েছে বিক্রেতারা। বাজারে সেই আগের চিত্রই। সরকার যেটুকু মওকুফ করেছে, সেটা এখন পেটে ঢুকছে ব্যবসায়ী আর সিন্ডিকেটের।
তিনি আরও বলেন, রোজার মাসকে কেন্দ্র করে প্রতি বছরই দেখি অসাধু চক্র সক্রিয় হয়ে ওঠে। অন্য মুসলিম দেশগুলোতে যেখানে রোজাকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ীরা শত শত পণ্যে বিশেষ ছাড় দেয় সেখানে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা সুযোগ বুঝে ক্রেতাদের পকেট কাটে। এই চিত্র মনে হয় না কোনো দিন পাল্টাবে।
আব্দুর রহমান নামক আরেক ক্রেতা বলেন, গত কয়েকদিন যাবত খবরে দেখে আসছি খেজুরের দাম কমেছে। যে কারণে কিছুটা স্বস্তিতেই ছিলাম। গতকাল (শনিবার) বেতন পেয়েছি, আজ বাজারে এসে দেখি সব খেজুরের দামই বাড়তি। এবার তো শুনেছি সরকার রোজার আগেই কিছু পণ্যের শুল্ক মওকুফ করেছিল। এটা তো নিঃসন্দেহে ভালো উদ্যোগ ছিল। জনগণ সুফল পেলে ভালো হতো। কিন্তু সেই সুফল দেখি বিক্রেতারা খেয়ে ফেলেছে।