প্রতিনিধি ৩ মার্চ ২০২৫ , ৮:০৭:০৬ প্রিন্ট সংস্করণ
মার্চের প্রথম সপ্তাহে সাধারণ চাকরিজীবীরা যখন ফেব্রুয়ারি মাসের বেতনের অপেক্ষায় আছেন তখন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার টি আলী ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক শান্ত আলী জানুয়ারি মাসের বেতন-ভাতার আশায় দিন গুনছেন।
শনিবার রাতে বাবা হয়েছেন এমপিওভুক্ত এ শিক্ষক। নিজের অবস্থার কথা তুলে ধরে শান্ত আলী বলেন, “দুই মাস বেতন পাচ্ছি না, বুঝেন অবস্থা। আমাদের বেতনতো আর আহামরি না।”
শুধু শান্ত নন, এমপিওভুক্ত ২০ হাজারের বেশি স্কুল-কলেজের পৌনে চার লাখ শিক্ষক-কর্মচারী এখনও জানুয়ারি মাসের বেতনভাতা পাননি।
রোববার পর্যন্ত তাদের বেতন-ভাতার সরকারি অংশ বা এমপিও ছাড় করতে পারেনি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। যদিও অধিদপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তাদের ভাষ্য, শিগগিরই এ অপেক্ষার অবসান হবে।
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জানুয়ারির বেতন নিয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সাধারণ প্রশাসন শাখার উপপরিচালক অধ্যাপক মো. শাহজাহান রোববার দুপুরে বলেন, “শিক্ষকদের জানুয়ারি মাসের বেতনের অনুমোদন পেতে জিও জারির কাগজ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।”
শিক্ষক শান্ত আলী বলছিলেন, “কথা ছিল, ইএফটির মাধ্যমে শিক্ষক-কর্মচারীরা মাসের শুরুতেই বেতন-ভাতা পাবেন, কিন্ত তা হয়নি।”
বেসরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের জানুয়ারির বেতন ছাড় না হলেও ইতোমধ্যে ৯ হাজার ১০২টি মাদ্রাসার এমপিওভুক্ত ১ লাখ ৭৯ হাজারের বেশি শিক্ষক কর্মচারীর ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ছাড় করেছে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর।
২ হাজার ২২২টি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের জানুয়ারির বেতনও ইতোমধ্যে ছাড় হয়েছে।
এদিকে গত বছরের সেপ্টেম্বরে নতুন যোগদান করা নারায়ণগঞ্জের পূর্বগ্রাম এম এল হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষক ফারুক আহমেদ বললেন, তিনি ছয় মাসেও বেতন-ভাতা পাননি।
“যোগদানের ছয় মাসেও বেতন হয়নি ঢাকা অঞ্চলের নতুন এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের। অগাস্টে এনটিআরসি (বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ) এর চূড়ান্ত সুপারিশ নিয়ে ১ সেপ্টেম্বর যোগদান করেছি।
“এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন করি ৮ সেপ্টেম্বর। ডিডি (ঢাকা অঞ্চলের উপপরিচালক) না থাকায় ফাইল আটকে থাকে। অবশেষে ৭ জানুয়ারি এমপিওভুক্ত হই। কিন্তু ইএফটির তথ্য এখন যাচাই-বাছাই শেষ না হওয়ায় বেতন পাইনি।”
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ইলেক্ট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার বা ইএফটির মাধ্যমে বেতন-ভাতা পান। তবে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা সরকারি কোষাগার থেকে ছাড় হলেও তা রাষ্ট্রায়ত্ত আটটি ব্যাংকের মাধ্যমে ‘অ্যানালগ’ পদ্ধতিতে দেওয়া হত।
তবে এই টাকা পেতে শিক্ষকদের নানা ভোগান্তিতে পড়তে হত।
ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে বেতন-ভাতা ছাড়ের জন্য কয়েক পর্যায়ে অনুমোদনসহ সংশ্লিষ্ট কাজে অনেক ক্ষেত্রেই এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন-ভাতা পেতে দেরি হয়। অনেক সময় পরের মাসের ১০ তারিখের পরও আগের মাসের বেতন-ভাতা পেতেন শিক্ষকরা।
শিক্ষকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত ৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবসে ইএফটিতে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দেওয়ার ঘোষণা দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
প্রাথমিকভাবে বেসরকারি এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজের ২০৯ জন শিক্ষক-কর্মচারীর অক্টোবর মাসের এমপিও ইএফটিতে ছাড় হয়।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে বেসরকারি স্কুল ও কলেজে কর্মরত ২ লাখ ৮৯ হাজার এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন ভাতার সরকারি অংশ বা এমপিও ইলেক্ট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার সিস্টেমে (ইএফটি) ছাড় শুরু করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর।
দ্বিতীয় ধাপে ৬৭ হাজার, তৃতীয় ধাপে ৮৪ হাজার এবং চতুর্থ ধাপে ৮ হাজার ২০০ এর বেশি শিক্ষক-কর্মচারী ইএফটিতে ডিসেম্বর মাসের বেতন পেয়েছেন। তবে তারা এখনও জানুয়ারি মাসের বেতন পাননি।
দ্রুত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা জানুয়ারি মাসের বেতন পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক মুহাম্মদ আজাদ খান।
তিনি রোববার বিকালে বলেন, “এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জানুয়ারি মাসের বেতন-ভাতার অর্থ ছাড়ের প্রস্তাব আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পাঠিয়ে দিয়েছি। আশা করছি দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাদের টাকা ছাড় হবে।”
এদিকে মাধ্যমিক ও উচ্চ অধিদপ্তরের ওপর চটেছেন শিক্ষকরা। শিক্ষকদের সংগঠন বাংলাদেশ শিক্ষক ফোরামের (বাশিফ) সভাপতি ও পাবনার সুজানগরের খলিলপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. হাবিবুল্লাহ রাজু বলেন, “এ রকম হলে শিক্ষকরা মাউশির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যেতে বাধ্য হবে।
“জানুয়ারির শুরুতে বেতন পেয়েছিলাম। কিন্তু তারপর আর কোনো শিক্ষক বেতন পাননি। রোজার মাস এসেছে। এ অবস্থায় সামান্য বেতন পাওয়া শিক্ষকরা চলবেন কীভাবে। সরকারের উচিত এ বিষয়গুলোতে দৃষ্টি দেওয়া।”