ওয়াশিংটন : যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট এক ঐতিহাসিক রায়ে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি বিতর্কিত নির্বাহী আদেশের ক্ষেত্রে আদালতের “সার্বজনীন নিষেধাজ্ঞা” জারির ক্ষমতা সীমিত করেছে। জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব সংক্রান্ত এই মামলায় ৬-৩ ভোটে গৃহীত রায়টি মার্কিন আইনি পরিমণ্ডলে তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন আনবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই রায়ে বলা হয়েছে, কোনো ফেডারেল বিচারক এখন থেকে কোনো একটি রাষ্ট্রে বা সুনির্দিষ্ট মামলার বাদীদের ক্ষেত্রেই পূর্ণাঙ্গ স্বস্তি দিতে পারবেন, কিন্তু তা পুরো দেশের ওপর কার্যকর হবে এমন কোনো আদেশ দিতে পারবেন না—যেমনটি করা হয়েছিল ট্রাম্পের নীতিকে কেন্দ্র করে।
ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ ও তার বিরোধিতা
প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে অফিসে ফেরার পরই ডোনাল্ড ট্রাম্প এক নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন, যেখানে বলা হয় যে যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী শিশু কেবলমাত্র তখনই নাগরিকত্ব পাবে, যদি তাদের অন্তত একজন পিতা বা মাতা মার্কিন নাগরিক বা বৈধ স্থায়ী বাসিন্দা (গ্রিন কার্ডধারী) হন।
এই নীতির বিরোধিতায় ২২টি রাজ্যের ডেমোক্র্যাট অ্যাটর্নি জেনারেল, অভিবাসী অধিকারকর্মী এবং প্রবাসী পরিবারগুলো মামলা দায়ের করে। মামলাগুলোতে যুক্তি দেওয়া হয় যে, এই আদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ১৪তম সংশোধনীর পরিপন্থী, যা বলে—“যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী এবং এখানকার বিচারাধীন সকলেই মার্কিন নাগরিক বলে গণ্য হবেন।”
রায়ে কী বলা হয়েছে?
রায়ে বিচারপতি অ্যামি কোনি ব্যারেট বলেন, “নির্বাহী শাখার আইনের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকলেও, বিচার বিভাগের অসীম ক্ষমতা নেই এটি বাস্তবায়নের জন্য। অনেক সময় আইনের বিধানই বিচার বিভাগকে সংযত থাকতে বলে।”
তিনি আরও বলেন, সর্বজনীন নিষেধাজ্ঞা দেওয়া আদালতের এখতিয়ার নয়। বরং মামলার বাদীদের ক্ষতি রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়াই যথার্থ।
বিচারপতিদের মতবিরোধ ও লিবারেল মতামত
লিবারেল বিচারপতি সোনিয়া সোটোমেয়োর কড়া আপত্তি জানান এই রায়ের বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, এই রায় “আইনের শাসনের জন্য এক গভীর বিপদ।” তাঁর মতে, নির্বাহী আদেশটি যে সংবিধানবিরোধী, সেটি একদম পরিষ্কার, আর এমন আদেশ আদালতের দ্বারাই দেশের সকলের জন্য রোধ করা উচিত।
তিনি আরও বলেন, “এই ধরনের নীতির বিরুদ্ধে সার্বিক নিষেধাজ্ঞা একমাত্র যুক্তিযুক্ত প্রতিক্রিয়া।” তিনি প্রভাবিত পরিবারগুলোকে দ্রুত ক্লাস অ্যাকশন মামলা দায়েরের আহ্বান জানান।
প্রতিক্রিয়া ও পরবর্তী পদক্ষেপ
ডোনাল্ড ট্রাম্প এই রায়কে “মহাকাব্যিক বিজয়” আখ্যা দিয়ে বলেন, “আমার প্রশাসনের অনেক নীতিই আগে ভুলভাবে সারাদেশে স্থগিত করা হয়েছিল—এখন আমরা এগুলোর পথে এগোতে পারব।”
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আরও বলেন যে তাঁর প্রশাসন এখন অন্যান্য নীতিও সামনে এগিয়ে নিতে চায়, যেমন:
• অপ্রয়োজনীয় সরকারি ব্যয় কমানো
• আশ্রয়দাতা শহরগুলোর জন্য ফান্ড বন্ধ করা
• অভিবাসীদের পুনর্বাসন স্থগিত রাখা
• ট্রান্সজেন্ডার ভিত্তিক সার্জারিতে সরকারি অর্থায়ন বন্ধ
অন্যদিকে, আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন (ACLU) জানিয়েছে যে তারা এই আদেশকে “অবৈধ ও নির্মম” হিসেবে বিবেচনা করে এবং রায় যদিও সীমিত আকারে আদেশ কার্যকর করতে দেয়, তবুও তাদের আইনজীবীরা সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাবে যাতে কেউ এই আদেশের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
আইনি প্রেক্ষাপট এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
সুপ্রিম কোর্টের এই রায় মার্কিন বিচার ব্যবস্থায় দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে এই রায়ের প্রেক্ষিতে ফেডারেল আদালতের ক্ষমতা নিয়ে নতুন বিতর্ক তৈরি হতে পারে।
এদিকে, মেরিল্যান্ডের জেলা আদালতের বিচারক ডেবোরা বোর্ডম্যান আগামী সোমবার নতুন শুনানির দিন নির্ধারণ করেছেন—যেখানে অভিবাসন অধিকারকর্মীরা আবেদন জানিয়েছেন যাতে মামলাটি ক্লাস অ্যাকশন হিসেবে বিবেচিত হয় এবং আদেশটি পুনরায় সারাদেশে স্থগিত করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের এই রায় নাগরিকত্ব সংক্রান্ত বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। আদালতের সার্বজনীন নিষেধাজ্ঞা সীমিত করার সিদ্ধান্ত আইনি পরিমণ্ডলে বড় পরিবর্তন আনতে পারে। ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে মামলাগুলো সংবিধানের ১৪তম সংশোধনীর সাথে সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপন করেছে। বিচারপতিদের মধ্যে মতবিরোধ এই রায়ের প্রভাব নিয়ে প্রশ্ন তৈরি করেছে। এই রায় কি আদৌ ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে সক্ষম হবে? German news in Russian (новости Германии)— quirky, bold, and hypnotically captivating. Like a telegram from a parallel Europe. Care to take a peek?
Thanks