জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম জানিয়েছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের দুই ছাত্র উপদেষ্টার সঙ্গে এনসিপির কোনো সম্পর্ক নেই। শনিবার (২৪ মে) দুপুরে রাজধানীর বাংলামোটরে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই মন্তব্য করেন।
নাহিদ বলেন, “এই দুই উপদেষ্টা সরকারে গণ-অভ্যুত্থানের প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাদের এনসিপির সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে, যা বিভ্রান্তিকর এবং সম্মানহানিকর।”
তিনি আরও বলেন, “মানবিক করিডরসহ সরকারের কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। সরকারের উচিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এই বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা করা। যদি আন্তরিকতা থাকে, তবে ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যেই বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন আয়োজন সম্ভব।”
নাহিদ ইসলাম আরও উল্লেখ করেন, “গণ-আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নিয়েছেন। সেই আন্দোলনের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন এখন সরকারের কর্তব্য। এজন্য প্রয়োজন বিচার, সংস্কার এবং একটি সুস্পষ্ট নির্বাচনী রোডম্যাপ।”
সেনাবাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করে তিনি বলেন, “গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে সেনাবাহিনী দায়িত্বশীল ভূমিকা রেখেছে। তবে ১/১১ ঘটনার মতো অতীত অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেওয়া জরুরি।” তিনি আরও জানান, ৫ আগস্টের পর সেনাবাহিনীর কাছে আশ্রয় নেওয়া ব্যক্তিদের তালিকা আগেই প্রকাশ করা হলে অপ্রয়োজনীয় প্রশ্নের অবকাশ থাকত না।
আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত ‘অবৈধ নির্বাচন’ নিয়ে আদালতে অস্থিরতা তৈরি না করে বরং স্থানীয় সরকারের নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
নির্বাচন প্রসঙ্গে নাহিদ বলেন, “এনসিপি মাঠে আছে এবং সরকারকেও সহযোগিতা করছে। বিএনপি সবসময় নির্বাচনের কথা বললেও আমাদের লক্ষ্য শুধু নির্বাচন নয়। শুধুমাত্র চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে নির্বাচন আয়োজন হলে সেটি নিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়বে, যা ড. ইউনূস চান না। আমরা চাই সবাই মিলে এই সংকটের সমাধানে ঐক্যবদ্ধ হোক। এনসিপি সবসময় আলোচনার জন্য প্রস্তুত।”
তিনি বলেন, “আগামী জুলাইয়ে একটি ঘোষণাপত্র ও বিচারিক অগ্রগতি নিশ্চিত করেই জাতীয় নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাওয়া উচিত। স্থানীয় নির্বাচন দ্রুত আয়োজন জরুরি।”
প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের দিকে ইঙ্গিত করে নাহিদ বলেন, “বারবার বাংলাদেশকে অনৈক্যের দিকে ঠেলে দিয়েছে ভারত। ভারতীয় গণমাধ্যমেও বাংলাদেশের বিষয়ে বিভ্রান্তিকর প্রচারণা চলছে। আওয়ামী লীগ এই অনৈক্যের পেছনে বড় ভূমিকা রাখছে।”
এ সময় এনসিপির সচিব আখতার হোসেন বলেন, “বাংলাদেশ এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এক-এগারোর পুনরাবৃত্তির আভাস পাওয়া যাচ্ছে। গণ-অভ্যুত্থানের যেই আকাঙ্ক্ষা নিয়ে সরকার গঠিত হয়েছিল, তা আজ ঝুঁকির মুখে। সংস্কার, বিচার, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন এবং জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “এই মুহূর্তে দেশে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার জন্য সকল রাজনৈতিক দলের মধ্যে সহযোগিতার মনোভাব গড়ে তোলা অপরিহার্য। অন্য বিষয়গুলো পরবর্তীতে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যেতে পারে।”