Wednesday, July 30, 2025

নামেমাত্র ড্রেজিংয়ে বন্ধ হচ্ছে দক্ষিণের নৌপথ।

Date:

সাব্বির আলম বাবু, বিশেষ প্রতিনিধিঃ
খনন কার্যক্রমের বছর না ঘুরতেই ডুবোচর পড়ছে কীর্তনখোলা নদীতে। নামেমাত্র ড্রেজিং কার্যক্রমের কারণে চরম নাব্য সংকট দেখা দিয়েছে বরিশাল-ঢাকা নৌপথে।

ফলে নির্ধারিত সময়ে পন্টুনে ভিড়তে পারছে না ছোট-বড় নৌযান।

একদিকে যাত্রী সংকট, অন্যদিকে অপরিকল্পিত ড্রেজিংয়ের কারণে বন্ধ হতে বসেছে বরিশালের নৌপথ। নৌপথটি বাচাঁনোর জোর দাবি জানিয়েছেন লঞ্চমালিকরা।


লঞ্চমালিকদের দাবি, ড্রেজিংয়ের নামে প্রতিবছর শুধু অর্থ লোপাট করা হয়েছে। যে খরচ ধরা হয় তার ৭০ শতাংশ টাকা নিজেদের পকেটে ভরেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও ড্রেজিং বিভাগ। ফলে ড্রেজিং কার্যক্রমের কোনো সুফল মিলছে না দক্ষিণাঞ্চলের নৌপথে। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, নদীবেষ্টিত এ অঞ্চলের ছোট-বড় প্রায় সব নদীতেই এখন অসংখ্য ডুবোচর। বিশেষ করে মেঘনা ও গজারিয়া নদীর দুই জায়গায়, বরিশাল-ভোলা রুটের বেশিরভাগ জায়গায়, বরিশাল-পাতারহাট-লক্ষ্মীপুর রুটে ভাটার সময় পানি তলানিতে পৌঁছে যাচ্ছে। এতে যাত্রীবাহী লঞ্চ এবং মালবাহী জাহাজ চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। পাশাপাশি বরিশাল নৌবন্দরেও নাব্য সংকট রয়েছে।


ঢাকা-বরিশাল, মিয়ারচর, পটুয়াখালী, ভোলা, লক্ষ্মীপুর, হিজলা, মেহেন্দীগঞ্জসহ বেশ কিছু রুটের যাত্রীদের অভিযোগ, প্রতিবছরই ড্রেজিং চলে, তারপরও শুকনা মৌসুমে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব হয় না। বিভিন্ন স্থানে ডুবোচরে লঞ্চ আটকে যাচ্ছে। ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা জোয়ারের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। এতে কাজের ব্যাঘাত ঘটছে। লোকসান গুনছেন লঞ্চমালিকরা।


বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ লঞ্চমালিক সমিতির ভাইস প্রেসিডেন্ট কাজী ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ড্রেজিং বিভাগ ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রতিবছর নদী খননের নামে অর্থ লোপাটের মচ্ছব করছে। তারা আগে ড্রেজিংয়ের সময় বিআইডব্লিউটিএ ও লঞ্চমালিকদের প্রতিনিধি সঙ্গে নিতেন। এখন সেই সিস্টেম বাদ দিয়ে ড্রেজিং বিভাগ একাই খনন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ফলে নিজেদের ইচ্ছামতো খননের বিল তুলে নিচ্ছে। নদীর বালি নদীতেই থেকে যাচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ড্রেজিং বিভাগের লোকজন ‘ভাটায় কাটেন জোয়ারে মাপেন’।

ভাটার সময় বালু কাটেন এক ফুট আর জোয়ার এলে মাপেন পাঁচ ফুট। এভাবেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও ড্রেজিং বিভাগ মিলে সরকারের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করছে। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে ড্রেজিং কার্যক্রমের সময় আগের নিয়মে বিআইডব্লিউটিএ ও লঞ্চমালিকদের একজন করে প্রতিনিধি রাখার দাবি জানান তিনি।


বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ লঞ্চমালিক সমিতির প্রেসিডেন্ট আক্কাস সিকদার বলেন, ‘প্রতিবছরই ড্রেজিং হয়। আসলে ড্রেজিংয়ের নামে চুরি হয়। যে খরচ ধরা হয় তার ৭০ শতাংশ টাকা নিজেদের পকেটে ভরছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও ড্রেজিং বিভাগ। ফলে ড্রেজিং কার্যক্রমের কোনো সুফল মিলছে না। এতে একে একে বন্ধ হচ্ছে দক্ষিণের নৌপথ। বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে নৌ পরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত হোসেনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। কারণ তার নিজের বাড়িও বরিশালের হিজলায়। তাই এই অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ তিনি বুঝবেন।’ লঞ্চের একাধিক মাস্টার জানান, বরিশাল নৌবন্দরেও নাব্য সংকট রয়েছে। যদিও সেখানে খনন চলছে। কিন্তু প্রতিবছরই অপরিকল্পিত খননের কারণে ঘাটে লঞ্চ ভেড়াতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ বরিশাল নদীর বন্দরের যুগ্ম পরিচালক (বন্দর ও পরিবহন বিভাগ) শেখ মোহাম্মদ সেলিম রেজা বলেন, নদীপথের বিভিন্ন স্থানের ডুবোচর খননের জন্য লঞ্চমালিকরা আমাদের জানিয়েছেন। আমরা বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জানিয়েছি। তারা আশ্বস্ত করেছেন, শিগগির এগুলো খনন করা হবে।
বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজিং বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী (পুর) মো. মামুন উর রশীদ বলেন, ‘লঞ্চমালিকদের এসব অভিযোগের আসলে সত্যতা নেই। কারণ এখনতো সব কিছুই স্বচ্ছতার মাধ্যমে করা হয়। আগে কী হয়েছে না হয়েছে জানি না। তবে এখন সব কিছু স্বচ্ছতার মাধ্যমে করা হয়। সামনের দিনগুলোতে বিআইডব্লিউটিএ ও লঞ্চমালিকদের একজন করে প্রতিনিধি সঙ্গে নিয়ে ড্রেজিং করা হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Share post:

spot_imgspot_img

Popular

More like this
Related

মাদকবিরোধী অভিযানে নীলফামারীতে কুখ্যাত বাশার আটক, পলাতক আরও দুই

আশীষ বিশ্বাস নীলফামারী প্রতিনিধি : নীলফামারীতে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের...

টেকনাফে র‍্যাবের সফল অভিযান: শীর্ষ সন্ত্রাসী শফি ডাকাত অস্ত্র-মাদকের পাহাড়ে আটক

ফরহাদ রহমান, টেকনাফ প্রতিনিধি টেকনাফের নয়াপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প-২৬ এর পাহাড়ি...

জেএসএস’র হাল ধরলেন আছিয়া আক্তার

“জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা”র হাল ধরলেন প্রতিষ্ঠাতার সহধর্মিণী মোছা: আছিয়া...

সান্তাহারে ট্রেন দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু

সান্তাহারে ট্রেন দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু মৌ আকতারঃবগুড়ার আদমদিঘী উপজেলার...