বিএনএসঃ
সাংবাদিকতা শুধুমাত্র তথ্য সংগ্রহ ও পরিবেশনের একটি মাধ্যম নয়; এটি একটি নৈতিক দায়িত্ব, যা সমাজ, রাষ্ট্র এবং মানবতার প্রতি দায়বদ্ধ। এই দায়িত্ব পালনে একজন সাংবাদিকের ব্যক্তিত্ববোধ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ব্যক্তিত্ববোধ বলতে বোঝানো হয় একটি ব্যক্তির চারিত্রিক দৃঢ়তা, মূল্যবোধ, আত্মমর্যাদা, এবং নৈতিকতা—যা তাকে সঠিক ও ভুলের মাঝে পার্থক্য করতে শেখায়।
আজকের সংবাদ জগতে যখন নানা রকম প্রভাব ও প্রলোভন কাজ করে, তখন একজন সাংবাদিককে নিরপেক্ষ, বস্তুনিষ্ঠ এবং সাহসী থেকে সত্য প্রকাশ করতে হলে তার ভেতরে ব্যক্তিত্ববোধের এক দৃঢ় ভিত্তি থাকা অপরিহার্য। সংবাদ সংগ্রহের সময় তথ্যের সত্যতা যাচাই, ব্যক্তির গোপনীয়তা রক্ষা, এবং জনস্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া—এই সব কিছুই নির্ভর করে একজন সাংবাদিকের ব্যক্তিত্ববোধের ওপর।
ব্যক্তিত্ববোধ একজন সাংবাদিককে অন্যায়ের বিরুদ্ধে কলম ধরতে সাহস যোগায়, ক্ষমতাবানদের চাপকে উপেক্ষা করতে মানসিক শক্তি দেয়। সে জানে, তার একটি খবর কারও জীবনে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলতে পারে, তাই সে দায়িত্বশীল। আবার এই ব্যক্তিত্ববোধই তাকে শোষিত, বঞ্চিত ও প্রান্তিক মানুষের কণ্ঠস্বর হতে উদ্বুদ্ধ করে। সংবাদ যখন পণ্যে পরিণত হয়, তখনও একজন সাংবাদিক তার নৈতিক অবস্থান থেকে বিচ্যুত হন না, যদি তার ব্যক্তিত্ব দৃঢ় হয়।
তবে শুধু ব্যক্তিত্ববোধ থাকলেই সাংবাদিকতা সফল হয় না। এর সাথে যুক্ত হতে হয় পেশাগত দক্ষতা, অনুসন্ধানী মনোভাব, এবং নিরলস পরিশ্রম। কিন্তু এই সব কিছুর মূল চালিকাশক্তি হিসেবে ব্যক্তিত্ববোধ কাজ করে, কারণ নৈতিক দৃঢ়তা ছাড়া কোনো পেশাদারিত্বই দীর্ঘস্থায়ী হয় না।
পরিশেষে বলা যায়, সাংবাদিকতা যদি হয় সমাজের দর্পণ, তবে ব্যক্তিত্ববোধ সেই দর্পণের পেছনের আলোকশক্তি—যার আলোয় সমাজ সত্যকে দেখতে পায়। তাই ব্যক্তিত্ববোধ সাংবাদিকতায় শুধু সহযোগিতা করে না, বরং এটি এক অনিবার্য ভিত্তি, যা একজন সাংবাদিককে সত্য ও ন্যায়ের পথে অবিচল রাখে।
লেখকঃ মুহম্মদ মনজুর হোসেন
চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ নিউজ সিন্ডিকেট
প্রকাশক ও সম্পাদক, দৈনিক সমতল।