দক্ষিণাঞ্চল প্রতিবেদক :হাসান মামুন
পিরোজপুরের নেছারাবাদের পৌর এলাকায় এক ব্যবসায়ীকে ৩ দফায় মারধরের পর তার দোকানে ঢুকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়ার ভিডিও ফুটেজ ভাইরাল হয়ে পড়েছে। এ ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ৪ মিনিট ১৪ সেকেন্ডের ওই ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে জনমনে ক্ষোভ-অসন্তোষ দেখা দেয়। ভিডিওতে দেখা ব্যবসায়ী মুকুল কুমার সাধক (৫৬) উপর হামলাকারীরা পৌর বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক কাজী আনিসুজ্জামানের অনুসারী বলে পরিচিত।
ভুক্তভোগী মঙ্গলবার (২০ মে) বিকেলে নেছারাবাদ থানায় এ ব্যাপারে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। জানাগেছে, জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে মুকুল কুমার সাধক মিডিয়ার সামনে এসে বিএনপি নেতা আনিসুজ্জামানের বিরুদ্ধে ইন্টারভিউ দিলে এবং এ সংক্রান্তে সংবাদ প্রকাশের পর সোমবার (১৯ মে) সন্ধ্যায় স্বরূপকাঠী পৌর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ন-আহবায়কের অনুসারী বলে পরিচিত দোকানে গিয়ে মুকুল সাধকের উপর এ হামলা চালায়। এ দিকে ইতিমধ্যে সিসিটিভিতে ধারণ করা
মারধরের ভিডিও ফুটেজ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে পড়ে। ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, ভুক্তভোগী মুকুল কুমার সাধক তার নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বসা এমন সময় উপজেলার বিএনপি নেতা মো. কাজী আনিসুজ্জামানের দুইজন অনুসারী অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করছে। এদের মধ্যে জুয়েল তালুকদার উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক নাসির তালুকদারের ছোট ভাই এবং অপরজন রুবেল হোসেন। এক পর্যায়ে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে! তুই সাংবাদিকদের ইন্টারভিউ দিয়েছো ? সাংবাদিক কেডা ? নাম বল ? তোর জিব্বা কেটে ফেলবো! (গালাগালি)। ভাইরাল ভিডিওতে আরো দেখা যায়, অনুসারীরা বলছে দোকান থেকে বের করে তোকে একেবারে তোকে মেরে ফেলবো! এ কথা বলে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে দোকান থেকে বের করে দেয়।
অভিযোগে মুকুল সাধক বলেন, তিনি পেশায় একজন দর্জি ও ইলেকট্রনিক্স পণ্য বিক্রেতা। উপজেলার হাসপাতাল সড়কের চিড়ার মিল এলাকায় জমি কিনে বসবাস করেন। তার প্রতিবেশী প্রদীপ কুমার দেবনাথ নামে এক ব্যক্তির সাথে জমি নিয়ে বিরোধ রয়েছে। স্বরূপকাঠী পৌর বিএনপির নেতা মো. কাজী আনিসুজ্জামান প্রদীপের দেবনাথের কাছ থেকে পার্শ্ববর্তী শরিকের একটি জমির বায়না করে নানা অযুহাতে আমার জমি তিনি দখল নিতে চাচ্ছেন। এ নিয়ে আমাকে নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছিলেন। তিনি আমাকে বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ করতে পালিত বাহিনী দ্বারা চাপ দেন। বিষয়টি নিয়ে মিডিয়ার সামনে কথা বলেছিলাম। এ কারনে ক্ষিপ্ত হয়ে কাজী আনিসুজ্জামান সোমবার (১৯ মে) সন্ধ্যায় আমার দোকানে এসে মেরে ফেলার হুমকি দেন। এর কিছুক্ষন পর অজ্ঞাত তার কিছু বাহিনী এসে আমাকে দোকান থেকে বের করে মারধর করেন। এভাবে মোট তিনবারে আমাকে মারধর করা হয়েছে। পূর্বেও একবার থানায় অভিযোগ দিয়েছি পুনরায় গতকালও একটি অভিযোগ দিয়েছি। আমার সাথে যে অন্যায় হয়েছে তার আমি উপযুক্ত বিচার চাই।
ভুক্তভোগী মুকুল কুমার সাধক আরো বলেন, আনিসুজ্জামান এভাবে চাপ দিয়ে বসত ভিটা থেকে উচ্ছেদ করতে চাচ্ছেন। এ বিয়ে ভুক্তভোগী মুকুল কুমার সাধক মঙ্গলবার (২০ মে) বিকেলে নেছারাবাদ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তিনি। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত বিএনপি নেতা মো. কাজী আনিসুজ্জামান বলেন, মুকুল কুমার সাধক প্রদীপ দেবনাথের জমি দখল করে খাচ্ছিল। আমি ওই জমি ক্রয়ের জন্য বায়না করেছি। তাই তাকে ধরে জিজ্ঞেস করেছি মাত্র। রাজনৈতিক ভাবে আমাকে হেও প্রতিপন্ন করার জন্য একটি মহল আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। স্বরূপকাঠি পৌর বিএনপির সদস্য সচিব কাজী কামাল হোসেন বলেন, এরকম একটি কথা শুনেছি। তবে যারা জুলুম, চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও মানুষের উপর নির্যাতন করে তারা দলের লোক হতে পারেনা। তারা যদি দলের লোক হয়েও থাকে তাহলে কোন ব্যক্তির দায় দল নেবেনা।
এ বিষয়ে পিরোজপুর জেলা বিএনপির আহবায়ক অধ্যক্ষ মো: আলমগীর হোসেন বলেন, এ বিষয়ে কোন অভিযোগ পাইনি। তবে ভুক্তভোগী মুকুল কুমার সাধকের সাথে আমাদের দলের কোন নেতাকর্মী কোন অসদাচরণ করে থাকে তাহলে অবশ্যই তদন্ত সাপেক্ষে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ বিষয়ে নেছারাবাদ থানার অফিসার্স ইনচার্জ মো. বনি আমিন বলেন, এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রসঙ্গত, গত ৫ আগষ্টের পর থেকে পৌর বিএনপি নেতা আনিসুজ্জামানের বিরুদ্ধে দখলবাজি, বাজারের ব্যবসায়ী থেকে চাঁদাবাজি সহ নানা অভিযোগ আছে। এ নিয়ে উপজেলা ও পৌর বিএনপির একটি অংশের নেতাদের সাথে কাজী আনিসুজ্জামানের মত বিরোধ রয়েছে।