ভারতের গভীর রাতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় পাকিস্তানের অন্তত ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৪৬ জন আহত হওয়ার খবরটি নিশ্চিত করেছে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর গণসংযোগ শাখা (আইএসপিআর)।
ভারতের গভীর রাতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় পাকিস্তানের বেসামরিক নাগরিক হতাহতের এই ঘটনাটি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা উত্তেজনাকে নিঃসন্দেহে আরও বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
এই হামলার ফলে উভয় দেশের মধ্যে পারস্পরিক অবিশ্বাস এবং শত্রুতা আরও গভীর হবে। পাকিস্তান এটিকে তাদের সার্বভৌমত্বের উপর সরাসরি আঘাত এবং আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হিসেবে দেখবে। এর প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান কী পদক্ষেপ নেয়, তা দেখার জন্য আন্তর্জাতিক মহলও উদ্বেগের সাথে অপেক্ষা করছে।
এই ঘটনা আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য একটি বড় হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে এবং উভয় দেশকে সংযম প্রদর্শনের পাশাপাশি কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে উত্তেজনা প্রশমনের দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত।
বুধবার (৭ মে, ২০২৫) পাকিস্তানি গণমাধ্যম ডনের বরাত দিয়ে আইএসপিআর কর্তৃক ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৪৬ জন আহত হওয়ার তথ্যটি নিশ্চিত করা হয়েছে।
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে এই হতাহতের সংখ্যা এবং ঘটনার সত্যতা আনুষ্ঠানিকভাবে গণমাধ্যমকে জানানো হয়েছে। ডনের মতো একটি প্রধান পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমে এই খবর প্রকাশিত হওয়ায়, এটি দেশটির অভ্যন্তরে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে এবং সম্ভবত এর রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক প্রভাবও থাকবে।
ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারত পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরের মুজাফফরাবাদ, কোটলি, বাহাওয়ালপুর, রাওয়ালকোট, চকস্বরী, ভিম্বার, নীলম ভ্যালি, ঝিলাম এবং চকওয়াল নয়টি অঞ্চলে ২৪টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়।
ভারতের এ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৪৬ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। হামলায় মুজাফফরাবাদ, কোটলি, বাহাওয়ালপুর, রাওয়ালকোট, চকস্বরী, ভিম্বার, নীলম ভ্যালি, ঝিলাম এবং চকওয়াল অঞ্চলে
আইএসপিআর-এর মহাপরিচালক (ডিজি) জেনারেল আহমেদ চৌধুরী হামলার নিন্দা জানান এবং একে কাপুরুষোচিত আক্রমণ বলে অভিহিত করেন।
আহমেদ চৌধুরী বলেন, “ভারত পরিকল্পিতভাবে বেসামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে, যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তিনি জানান, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে মুজাফফরাবাদ, কোটলি ও ঝিলাম, যেখানে সাধারণ জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতৃত্ব এই হামলার কঠোর নিন্দা জানিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠক আহ্বান করেছেন। সূত্র মতে, বৈঠকে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়ার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হবে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের কর্মকাণ্ডকে লজ্জাজনক বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, যে কোনও দেশের উচিত নিরীহ মানুষের প্রাণ নেওয়া এড়িয়ে চলা। ভারতের এমন পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক শান্তির প্রতি অবজ্ঞার সামিল।
পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে ভারতের এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বিষয়ে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা চলছে। তারা জোরালোভাবে অভিযোগ করছে যে ভারত আন্তর্জাতিক নিয়ম-কানুন সুস্পষ্টভাবে লঙ্ঘন করে তাদের ভূখণ্ডে আগ্রাসন চালিয়েছে। পাকিস্তান এই হামলাকে ‘বিনা উস্কানিতে এবং প্রকাশ্য যুদ্ধ ঘোষণার শামিল’ বলেও অভিহিত করেছে। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, এই হামলায় নিরীহ বেসামরিক নাগরিক, বিশেষ করে নারী ও শিশুরা নিহত হয়েছে, যা মানবতাবিরোধী এবং আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
পাকিস্তান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ভারতের এই পদক্ষেপের নিন্দা জানানোর এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে, সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে। তারা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে বিষয়টি উত্থাপন করারও প্রস্তুতি নিচ্ছে, যাতে ভারতের উপর আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করা যায়।