সংবাদপত্রের কালো দিবস ১৬ জুন উপলক্ষে এক বিবৃতিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হলো বহুদলীয় গণতন্ত্রের একটি মৌলিক ও অপরিহার্য উপাদান। গণতন্ত্রকে সুরক্ষা ও স্থিতিশীল রাখতে হলে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করাই একান্ত প্রয়োজন।
রোববার (১৫ জুন) দিবাগত রাতে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত এক গণমাধ্যম বিবৃতিতে এ মন্তব্য করেন তারেক রহমান।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায়। সেদিন তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী সব রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত করে একদলীয় স্বৈরশাসন ‘বাকশাল’ কায়েম করেছিল। এরই অংশ হিসেবে স্বাধীন সংবাদপত্রগুলো বন্ধ করে কেবল সরকার-অনুগত চারটি পত্রিকা রেখে বাকস্বাধীনতা হরণ করা হয়। এই পদক্ষেপ গোটা জাতিকে নিঃশব্দ করে দিয়েছিল এবং শত শত সংবাদকর্মী বেকার হয়ে পড়েন, যাঁদের জীবিকা এবং পরিবার অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে।
তারেক রহমান বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল চেতনা ছিল ভৌগোলিক স্বাধীনতার পাশাপাশি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা। আর গণতন্ত্রের অন্যতম ভিত্তি হলো বাক, চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা। সংবাদপত্রের স্বাধীনতার মধ্য দিয়েই রাষ্ট্রের জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয় এবং নাগরিকের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটে রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে।
তিনি অভিযোগ করেন, স্বাধীনতাত্তোর সরকার এই চেতনাকে পদদলিত করে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করে এবং জনগণের মৌলিক অধিকার হরণ করে। তিনি বলেন, “পরে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানই বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনেন। তিনি বাকশাল সরকারের সকল অগণতান্ত্রিক আইন বাতিল করেন।”
তারেক রহমান বলেন, বর্তমান সরকারও অতীতের স্বৈরাচারী ধারা অনুসরণ করে নতুন আঙ্গিকে একদলীয় শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্টের মতো কঠোর আইন প্রণয়ন করে সাংবাদিক ও গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করা হয়েছে। এসব ‘ড্রাকোনিয়ান আইন’-এর মাধ্যমে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, “সত্য উচ্চারণ করলেই নির্যাতনের খড়গ নেমে এসেছে। সাংবাদিকরা সর্বদা শঙ্কিত থেকেছেন। গণমাধ্যম একটি ভয়াল অবস্থায় উপনীত হয়েছিল।”
বিবৃতির শেষাংশে তারেক রহমান বলেন, “৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পর গণমাধ্যম কিছুটা স্বাধীনতা ফিরে পেয়েছে বটে, তবে এখনো পুরোপুরি মুক্ত নয়। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ছাড়া গণতন্ত্র টিকতে পারে না। গণতন্ত্রের নিরাপত্তা ও স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে হলে অবশ্যই সংবাদপত্রের স্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে।”
তিনি এই দিবসে সকল গণমাধ্যমকর্মী ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে সংগ্রামরত মানুষদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেন এবং বলেন, “সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনই হতে পারে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের প্রধান হাতিয়ার।”