সরকারি চাকরি সংশোধন অধ্যাদেশ-২০২৫ বাতিলের দাবিতে সচিবালয়ে ফের আন্দোলনে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা
সরকারি চাকরি সংশোধন অধ্যাদেশ–২০২৫ বাতিলের দাবিতে ফের বিক্ষোভে নেমেছেন সচিবালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে সোমবার (১৬ জুন) সকাল থেকে রাজধানীর সচিবালয় এলাকায় এই কর্মসূচি পালন করছেন তারা।
বিক্ষোভের আয়োজন করে ‘সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরাম’। তারা দীর্ঘদিন ধরেই এই অধ্যাদেশের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে আসছে। গত ২৫ মে সরকার ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ গেজেট আকারে প্রকাশ করার পর থেকেই ফোরাম সদস্যরা একে “নিবর্তনমূলক” ও “কালাকানুন” আখ্যা দিয়ে বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছেন।
ঐক্য ফোরামের কো-চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম ও বাদিউল কবীর আগেই ঈদের পর সারা দেশে বৃহত্তর আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেই ধারাবাহিকতায় তারা সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ছাড়া আরও কয়েকজন উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপিও প্রদান করেন।
এর আগে গত ২২ মে উপদেষ্টা পরিষদের এক বৈঠকে এই সংশোধিত অধ্যাদেশের খসড়ার অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর ২৫ মে সন্ধ্যায় গেজেট প্রকাশ করা হয়, যা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ সৃষ্টি করে।
এই অধ্যাদেশে চারটি বিশেষ আচরণকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যার ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা যেতে পারে। অপরাধগুলো হলো—
-
সরকারি কর্মচারীর এমন কোনো কর্মকাণ্ড, যা অনানুগত্যের শামিল বা অন্য কর্মচারীদের মধ্যে অনানুগত্য ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের পরিবেশ সৃষ্টি করে।
-
কর্মস্থল থেকে বিনা অনুমতিতে বা অযৌক্তিক কারণে অনুপস্থিত থাকা বা কর্তব্যে অবহেলা।
-
অন্য কোনো কর্মচারীকে কর্তব্য পালনে বাধা দেওয়া, কর্মস্থলে উপস্থিত না হতে উসকানি বা প্ররোচনা দেওয়া।
-
কর্মস্থলে দায়িত্ব পালনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি।
অধ্যাদেশ অনুযায়ী, এসব অপরাধের অভিযোগ উঠলে সাত কর্মদিবসের মধ্যে অভিযুক্তকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে আরও সাত দিনের মধ্যে শাস্তির বিষয়েও কারণ দর্শাতে বলা হবে। প্রয়োজনে দ্রুত বিচার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে দোষী কর্মচারীকে চাকরিচ্যুতির মুখোমুখি করা হবে।
আন্দোলনকারীরা বলছেন, এই অধ্যাদেশ সরকারি চাকরিজীবীদের ন্যায্য অধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে হরণ করবে। এছাড়া এটি কর্মক্ষেত্রে একটি ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করবে বলেও অভিযোগ করছেন তারা।
এক আন্দোলনকারী বলেন, “এই আইন কার্যকর হলে প্রশাসনে স্বাধীন মত প্রকাশ, বৈধ দাবিতে আন্দোলন ও সংগঠন করার সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণ্ন হবে।”
সচিবালয়ে চলমান এই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় আগামী দিনগুলোতে বৃহত্তর কর্মসূচি গ্রহণ করা হতে পারে বলে জানিয়েছে ঐক্য ফোরামের নেতারা। তারা আশা করছেন, সরকার এ বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করবে এবং অধ্যাদেশটি দ্রুত বাতিল করবে। অন্যথায় কঠোর কর্মসূচির মাধ্যমে রাজপথে নামার হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে।
পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে এখন পর্যন্ত কোনো সহিংসতা বা অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।