সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া বাতিলের দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে দেশের প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সোমবার (২৬ মে) সকাল থেকেই বিক্ষোভে অংশ নিয়ে সরকারকে দাবি মানতে চূড়ান্ত হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
সকাল ১১টার দিকে সচিবালয়ের ৬ নম্বর ভবনের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। এতে নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশ সচিবালয় সংযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মো. বাদিউল কবির এবং কো-চেয়ারম্যান মো. নুরুল ইসলাম। বিক্ষোভকারীরা “অবৈধ কালো আইন মানি না”, “লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে”, “আপস নয়, সংগ্রাম — সংগ্রামই শেষ কথা” ইত্যাদি স্লোগানে সচিবালয় চত্বর মুখর করে তোলেন।
আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, দাবি না মানলে সোমবারের মধ্যেই সচিবালয়ে ‘তালা ঝুলিয়ে দেওয়া’র মত কঠোর কর্মসূচি পালন করা হবে। এরই অংশ হিসেবে রোববার (২৫ মে) ও সোমবার সচিবালয়ে কার্যক্রমে বিরাট প্রভাব পড়েছে।
কী আছে অধ্যাদেশে? সরকার গত বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়ায় অনুমোদন দেয়। এরপর রোববার সন্ধ্যায় এটি গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয় এবং বলা হয়, ‘ইহা অবিলম্বে কার্যকর হবে।’ নতুন এই অধ্যাদেশে সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-এর ধারা ৩৭-এর পর একটি নতুন ধারা ৩৭(ক) যুক্ত করা হয়েছে। এতে সরকারি কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের বিধান রাখা হয়েছে।
বিশেষভাবে, চারটি অপরাধ ও তিন ধরনের শাস্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে:
অপরাধসমূহ: অন্য কর্মচারীদের মধ্যে অনানুগত্য সৃষ্টি বা শৃঙ্খলা ভঙ্গ হয় এমন কাজ করা।
যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া সংঘবদ্ধভাবে বা এককভাবে কাজে অনুপস্থিত থাকা।
অন্যদের কাজে অনুপস্থিত থাকতে বা দায়িত্বে অবহেলা করতে উসকানি দেওয়া।
দায়িত্বে অনুপস্থিত থাকার জন্য অন্যকে প্ররোচিত করা।
বিক্ষোভকারীরা এই অধ্যাদেশকে ‘নিবর্তনমূলক ও কালাকানুন’ আখ্যা দিয়ে বলেন, এটি সরকারের একতরফা সিদ্ধান্ত। সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলছেন, তাদের মতামত ছাড়াই এমন একটি বিধান চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে যা তাদের সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণ্ণ করছে।
বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদ দাবি করেছে, যতক্ষণ না এই অধ্যাদেশ বাতিল করা হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
চলমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকারি কর্মচারীদের দাবি-দাওয়া পর্যালোচনার জন্য একটি স্থায়ী কমিটি পুনর্গঠন করেছে। এই কমিটি পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে সরকারের কাছে সুপারিশ জমা দেবে।
তবে আন্দোলনকারীরা বলছেন, কেবল কমিটি নয়— স্পষ্ট ঘোষণা ও অধ্যাদেশ বাতিল না হওয়া পর্যন্ত তারা পিছু হটবেন না।