• আন্তর্জাতিক

    ইসরায়েল গাজা পুরোপুরি অবরুদ্ধ, ‘ফুরিয়ে আসছে খাবার’

      প্রতিনিধি ১০ এপ্রিল ২০২৫ , ৭:৪৪:৩৩ প্রিন্ট সংস্করণ

    ইসরায়েল গাজা পুরোপুরি অবরুদ্ধ, ‘ফুরিয়ে আসছে খাবার’
    ইসরায়েল গাজা পুরোপুরি অবরুদ্ধ, ‘ফুরিয়ে আসছে খাবার’

    আপনার সামাজিক প্ল্যাটফর্ম এই পোস্ট শেয়ার করুন

    বোমাগুলো এখনও রেহাব আখরাস ও তার পরিবারের সদস্যদের প্রাণ কেড়ে নেয়নি, কিন্তু মার্চের শুরু থেকে গাজার যে চেকপয়েন্টগুলো ইসরায়েল বন্ধ করে রেখেছে সেগুলো দ্রুত না খুললে তারা নিশ্চিতভাবে অনাহারে মারা যাবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

    ইসরায়েল ছয় সপ্তাহ ধরে গাজা ভূখণ্ডের ২৩ লাখ বাসিন্দার সব সরবরাহ পুরোপুরিভাবে বন্ধ করে রেখেছে। চলতি বছরের শুরুর দিকে যুদ্ধবিরতি চলমান থাকা অবস্থায় গাজায় যে খাদ্য মজুদ গড়ে তোলা হয়েছিল তা শেষের পথে। জরুরি খাবার বিতরণ শেষ হতে চলেছে, বেকারিগুলো বন্ধ হয়ে গেছে, বাজারে কোনো পণ্য নেই।

    রয়টার্স জানিয়েছে, খান ইউনিস শহর থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে আখরাস (৬৪) এখন প্লাস্টিকের শিটে তৈরি জনাকীর্ণ একটি শিবিরে বসবাস করছেন। সেখানে একটি হাঁড়িতে মটরশুঁটি সিদ্ধ করছিলেন তিনি। অবশিষ্ট খাবার যা কিছু ছিল সবই এখন ওই হাঁড়িতে।

    তিনি বলেন, “আমাদের পরিবারে ১৩ জন, এক হাঁড়ি মটরশুঁটিতে আমাদের কতোটা হবে?

    “আমরা ঘুমাতে গেছি ও জেগেছি যুদ্ধ ও বিমান হামলার মধ্যে, এরমধ্যেও বেঁচে আছি। কিন্তু আনাহারে বাঁচতে পারবো না, আমরাও পারবো না আমাদের শিশুগুলোও পারবে না।”

    নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরের উত্তরে একটি উন্মুক্ত জরুরি রান্নাঘরের সামনে গরম ভাতের জন্য কয়েকশ ফিলিস্তিনি লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে। ছোট শিশুরা লাইনের সামনে জড়ো হয়ে তাদের পাত্রগুলো দোলাচ্ছে, বাড়ি নেওয়ার জন্য কিছু দিতে বলছে তারা।

    ত্রাণ সংস্থাগুলো এসব জরুরি খাবার বিতরণ করছে। তারা জানিয়েছে, আরও খাবার আনতে না পারলে কয়েকদিনের মধ্যেই এ উদ্যোগ বন্ধ হয়ে যাবে।

    বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচী গাজা ভূখণ্ডের ২৫টি বেকারিকে রুটি সরবরাহ করতে ব্যবহার করতো। এই সবগুলো বেকারিই এখন বন্ধ। রেশন হ্রাস করতে এই সংস্থাটিও শিগগিরই খাবারের পার্সেল বিতরণ স্থগিত করতে হবে।

    ‘অনেক, অনেক গভীর ক্ষুধা’

    ফিলিস্তিনিদের ত্রাণের জন্য জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ বলেছে, “সমস্ত প্রাথমিক সরবরাহ শেষ হয়ে আসছে। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ গাজা ভূখণ্ডে অবরোধ আরোপ করার পর থেকে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে পণ্যের দাম দ্রুতগতিতে বেড়েছে।

    “এর অর্থ বাচ্চারা, শিশুরা ক্ষুধা নিয়েই ঘুমাতে যাচ্ছে। মৌলিক সরবরাহগুলো ছাড়া দিন কাটিয়ে গাজা ইঞ্চি ইঞ্চি করে অনেক অনেক গভীর ক্ষুধার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।”

    গাজার বাজারগুলোতে এখন সামান্য খাদ্যপণ্য অবশিষ্ট আছে। সেগুলো চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। ২৫ কেজির আটার এক বস্তার দাম আগে ছিল ৬ ডলার আর এখন এর দশগুণ বেড়ে ৬০ ডলার হয়ে গেছে। এক লিটার রান্নার তেলের দাম ছিল দেড় ডলার, এখন যদি আপনি খুঁজে পান কিনতে ১০ ডলার খরচ করতে হবে। আর ভাগ্যবান কেউ হয়তো ৫ ডলার দিয়ে কখনো এক কৌটা সার্ডিন মাছ পেয়ে যেতে পারে।

    চিকিৎসা ত্রাণ সংস্থা মেদসাঁ সঁ ফ্রোঁতিয়ের জানিয়েছে, তারা মারাত্মক অপুষ্টিতে ভোগা শিশু ও গর্ভবতী নারীর দেখা পাচ্ছেন। স্তন্যদানকারী মায়েরা অতিরিক্ত ক্ষুধার্ত থাকায় বাচ্চাকে দেওয়ার মতো যথেষ্ট দুধ উৎপাদন করতে পারছেন না।

    গাজা অনাহারের সংকটে ভুগছে, এটি অস্বীকার করেছে ইসরায়েল। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলছে, হামাসের যোদ্ধারা গাজার ত্রাণ শোষণ করছে। হামাসের যোদ্ধাদের ত্রাণ পাওয়া বন্ধ করতে সরবরাহ বন্ধ রাখতে হচ্ছে বলে দাবি ইসরায়েলি বাহিনীর।

    ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ৪২ দিনের অস্ত্রবিরতি চলাকালে গাজায় ২৫ হাজার ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশ করেছে আর হামাস তাদের যুদ্ধ সক্ষমতা পুনর্গঠন করতে এই ত্রাণ ব্যবহার করেছে।

    হামাস ত্রাণ শোষণের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, ইসরায়েল অনাহারকে সামরিক কৌশল হিসেবে ব্যবহার করছে।

    নুসেইরাতের বাসিন্দা নেয়ামা ফারজালা প্রত্যেকদিন ভোর ৬টায় বাইরে বের হন। তিনি এক গামলা ভাতের জন্য ভূখণ্ডের রান্নাঘর থেকে রান্নাঘরগুলেতে ঘুরে বেড়ান।

    “আমরা যদি বিমান হামলায় মারা না যাই, অনাহারে মারা যাবো,” বলেন তিনি।

    “আমার ছোট ছেলেটি যখন বলে ‘মা, আমি এক গ্লাস দুধ চাই’, আমার বুক ফেঁটে যায়।”

     

     

    আরও খবর

    Sponsered content